রবিবার ।। ৯ মহর্‌রম, ১৪৪৭।। ২২ আষাঢ়, ১৪৩২ ।। ৬ জুলাই, ২০২৫

“তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, তোমাদেরকে মানবতার কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে-” [সূরা আলে-ইমরান- ১১০]

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?” (সূরা যুমার- ০৯) ।

শিক্ষা ছাড়া জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। শিক্ষিত জাতি মানেই উন্নত জাতি । শিক্ষার জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীতে দ্বীন টিকিয়ে রাখার জন্য মাদরাসা খুবিই জরুরী।
শত বছরের অনাদরে লালিত প্রাচীন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক সমাজ ও মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মুসলমানরা এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যাশী যা একদিকে তাদের হৃদয়ে সৃষ্টি করবে বলিষ্ঠ ঈমানী ভিত্তি এবং অন্যদিকে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলোকে ইসলামী জীবনাদর্শের মানদন্ডে যাচাই করে এক বলিষ্ঠ ও উন্নত মুসলিম জাতি হিসাবে জীবনক্ষেত্র নির্মাণে সক্ষম হবে।
যশোর শহরতলির বিরামপুরে রয়েছে বহু পুরানো ঐতিয্যবাহী ইসলামী বিদ্যাপিঠ বিরামপুর শামসুল উলুম হাফিজিয়া কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা।  যা ১৯৭৮ সালে স্থাপিত হয় এবং ১৯৯৪ সালে দ্বিতিয় বারের মত সংস্কার হলেও পথচলার দির্ঘ ৪৪ বছরেও আসেনি লেখাপড়ার মানউন্নয়ন, হয়নি আধুনিকায়ন, গড়ে ওঠেনি যুগোপযোগী ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে। আমাদের অনেক পরে যে সকল মাদ্রাসা গুলি স্থাপিত হয়েছে আজ সেই মাদ্রাসাগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়ে দ্বীনের আলো ছড়াচ্ছে । আগামীতে আমরা বিরামপুর শামসুল উলুম হাফিজিয়া, কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা কে যুগোপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পরিকল্পনা

একাডেমিক ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত তথ্য
নাম সংস্করণঃ আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ধারণার সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুক্ত এবং এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর্ন্তজাতিক মান দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে বিরামপুর শামসুল উলুম হাফিজিয়া,কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা কে যুগোপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে নামের সংস্করণ করা জরুরী বলে মনে করা হয়েছে। মুল নাম ঠিকরেখে বিশ্বের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে লেখনি ও সহজ উচ্চারণে সংস্করণ করে জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসা নাম দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

নিবন্ধনঃ
জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসা নামে সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সিলেবাসঃ
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, স্কুল বোর্ড, ইংলিশ মিডিয়াম, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কওমী মাদরাসা, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের সিলেবাসকে সামনে রেখে সরকারের সাথে সামঞ্জস্য করে একটি যুগোপযোগী সিলেবাস তৈরী করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে কুরআন, হাদিস, ফিকহ, ইংরেজী, বাংলা ,আরবী, গণিত, সাধারণ জ্ঞান,কম্পিউটার আর্টস এন্ড ক্যালিগ্রাফিসহ বিভিন্ন বিষয় স্থান পায়।

ভাষা শিক্ষা
জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসার  শিক্ষার্থীরা যাতে ইংরেজী ও আরবীতে কথা বলতে পারে এবং ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা ।

কম্পিউটার ল্যাব
কম্পিউটার শিক্ষা ছাড়া আজকের যুগে সব কিছু অচল । প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার দিয়ে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করা।

পরীক্ষা পদ্ধতি
জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসায় বছরে ৩ টি সেমিস্টারসহ Class Test , Monthly Test এবং Model Test – গ্রেডিং পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা ।

বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
সাপ্তাহিক কোরাআন তেলওয়াত-সীরাতুন্নবী সা.মাহফিল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান, সাধারণ জ্ঞান, জানা-অজানা অনুষ্ঠান, বার্ষিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান,ফুটবল,ব্যাডমিন্টন,ক্রিকেটসহ শরীয়ত সম্মত খেলাধূলা,রচনা প্রতিযোগিতা, সুন্দর হস্তাক্ষর প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ ,(আরবী,ইংরেজী ও বাংলা) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রোগ্রাম এ কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা।

লাইব্রেরী
পড়ালেখার জন্য লাইব্রেরী অপরিহার্য। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য লাইব্রেরী স্থাপন করা।

নিজস্ব সফটওয়ারের ব্যবহার
আধুনিক জগতে প্রযুক্তির ব্যাবহার সর্বজনীন ও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক । তাই নিজস্ব সফটওয়ারের মাধ্যমে হিসাব থেকে শুরু করে সব কিছু প্রযুক্তিগত স্থাপন গ্রহন করা ।

হোস্টেল ব্যবস্থাপনা
জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসার প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য তোষক, মশারী, ওয়্যারড্রপ, নিজেস্ব লকার, প্লেট-গ্লাস ব্যবস্থাসহ উন্নত থাকার ব্যবস্থা । পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বয় এবং সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা রাখা এবং স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা ও তিনবার উন্নত খাবার পরিবেশন করা । এ ছাড়া নিজস্ব ডাক্তারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে এবং মাদরাসাতে স্থায়ীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধসহ মিনি ফার্মেসী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বৃত্তি প্রকল্প
জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসা প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরি করা। শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ও মেধার বিকাশ সাধনে বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রকল্প চালু করা।

শিক্ষকমন্ডলী ও প্রশিক্ষণ
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের বিকল্প নেই । সেজন্য জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসা জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ব্যবস্থা গ্রহন । আদর্শ ও যোগ্য মানুষ তৈরী করার জন্য প্রয়োজন যোগ্য ও আদর্শ শিক্ষক। তাই অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। শিক্ষকের জন্য দু’টি কোর্স ১. Basic ২. Subjective.

ব্যবস্থাপনা
জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসা পরিচালনার জন্য রয়েছে ৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি, রয়েছে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্য্যনির্বাহী কমিটি। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক বৈঠক ও সভার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা গ্রহন করতে হবে । আমাদের ভিন্ন মতাদর্শ থাকতেই পারে কিন্তু যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কাজকরি তখন আমাদের ভিন্ন মতাদর্শ বলে আর কিছুেই থাকেনা। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সকলের আন্তরিকতা ও ভালবাসা দিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে জামেয়া ইসলামিয়া শামসুল উলুম কওমী মাদরাসা। আমাদের সকল পরিকল্পনা মহান রাব্বুল আলামীনের রহমতের পাশাপাশি সম্মানিত অভিভাবক ও শুভাকাংখীদের সার্বক্ষণিক পরামর্শের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সহায় হোন। আমীন। সুম্মা আমীন।